বিনোদন ডেস্ক : শর্মিলা ঠাকুর একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী। সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম নায়িকা তিনি। প্রতিভা, সপ্রতিভতা, আধুনিকতা, সৌন্দর্য আর পারিবারিক আভিজাত্যের অনবদ্য সমন্বয়ের নাম শর্মিলা ঠাকুর।
তার প্রথম সিনেমা সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার। শর্মিলা বিখ্যাত ক্রিকেটার মনসুর আলি খান পাতৌদির স্ত্রী। তার ছেলে সইফ আলি খান একজন হিন্দি সিনেমার সফল নায়ক এবং তার মেয়ে সোহা আলি খান একজন হিন্দি সিনেমার অভিনেত্রী। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৪৬ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৭১ বছরে পা দিলেন এই অভিনেত্রী।
বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর প্রতি বিবার্তা ২৪.নেট পরিবারের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো ।
১৯৬৪ সালে শাম্মী কাপুরের ‘কাশ্মীর কী কলি’ নায়িকা হয়ে মাত করলেন বহু পুরুষকে। তার সৌন্দর্য, কথা বলার ভঙ্গি সবেতেই যেন মুগ্ধতার রেশ রয়ে যায়।
১৯৬৭ সালে ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’-এ চরম সাহসী হয়ে সবাইকে চমকে দেন শর্মিলা।
ছয়ের দশকে কোনো বলিউড নায়িকাকে বিকিনি পরা দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠলো। কিন্তু আড়ালে কিংবা সামনে সবাই স্বীকার করলেন তাকে মানিয়েছে অসাধারণ।
এর ২ বছর পর টাইগার তথা ভারতীয় ক্রিকেটের ‘নবাব’কে বিয়ে করেন তিনি। তার ক্যারিয়ারে একাধিক হিট ছবি রয়েছে। বলিউড এবং টালিউড ২ ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করেন তিনি। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘আবার অরণ্যে’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। ২০০৩ সালে পেয়েছেন পদ্মভূষণ।
সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন ১৩ বছরের একজন মেয়ের জন্য, যাকে অপুর স্ত্রী অপর্ণার চরিত্রে মানাবে। হঠাৎ বাড়িতে একটা ফোন এলো। বাবার সঙ্গে কথা বললেন মানিকদা। তখন তিনি রীতিমতো বিখ্যাত। ‘পথের পাঁচালী’র দৌলতে মানিকদার নাম তখন ঘরে ঘরে। ‘জলসাঘর’ ও ‘অপরাজিত’ও রিলিজ করে গেছে। সত্যজিৎ রায় তখন হাউজহোল্ড নেম। বাবা একটা কথাই বলেছিলেন মানিকদাকে যদি মনে করেন ও এই রোলটা ঠিকমতো করতে পারছে, তবেই ওকে নেবেন। ওরা কীভাবে আমাকে ডিসকভার করলেন জানি না।’
হ্যাঁ, এ ‘ডিসকভারের’ পর শর্মিলা ঠাকুর কেবল এগিয়ে গেছেন। তার সফলতার গল্প সেই পুরোনো কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন। এ ব্যাপারে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, ‘আমি কোনোদিনই বিশেষভাবে কিছু চাইনি। আমার কোনো চাহিদা ছিল না। সবকিছু নিজে থেকেই এসেছে। আমার তার জন্য দৌড়াতে হয়নি। কিছু না পেলে দুঃখ পাইনি। আবার কিছু পেলেও আনন্দে আটখানা হইনি। আসলে আমার জীবনে কোনোকিছু প্ল্যান করে হয়নি। হয়ে গেছে বলা যেতে পারে। এ বয়সে এসে মাঝেমধ্যে মনে হয়, কীভাবে কেটে গেল জীবনটা! অনেকটা রোলিং স্টোনের মতো। নিজের ছন্দেই গড়িয়ে গেল যেন!’
শর্মিলা ঠাকুর একজন সফল মানুষ। প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য, পরিবার সবখানে তিনি সফল। একদিকে বনেদি ঠাকুরবাড়ি, অন্যদিকে অভিজাত নবাববাড়ি। বনেদিপনা আর আভিজাত্যের মধ্যেও তিনি অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, ‘আমি আমার মতো করে লাইফটা কাটিয়েছি। যেটা আমার মনে চেয়েছে করেছি। টাইগারের (স্বামী মনসুর আলী খান পতৌদি) সঙ্গে যখন আমার পরিচয়, তখন ওর বয়স ২৩, আমার ২০। ও তখন সাসেক্স কাউন্টি ক্যাপ্টেন, আর আমি মুম্বাইয়ে চুটিয়ে ছবি করছি। বিয়ে করি ১৯৬৯ সালে। ও হায়দরাবাদে খেলতে গিয়েছিল। আমরা বিয়ে করব বলে ঠিক করি, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত মহলে একটা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছিল। সবাই ধরে নিয়েছিল, এ বিয়ে টিকবে না। দুই পরিবারেও খানিকটা অশান্তি হয়েছিল। তাছাড়া কারও পরিবারের কোনো সদস্যই এর আগে ধর্মের বাইরে বিয়ে করেনি। বাবা আপত্তি তোলেননি। সমস্যাটা হয়েছিল ঠাকুরমাকে নিয়ে। আস্তে আস্তে অবশ্য সবাই মেনে নিলেন। মা-বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। সে সময় আমাদের বিয়েটা মানুষের কাছে রূপকথার মতো ছিল। আমি হিন্দু, প্যাট মুসলিম; আমি ফিল্মস্টার ও নবাব; সব মিলিয়ে অন্যরকম। তাই আশঙ্কা ছিল বেশি। আমি অত কিছু ভাবিনি। মানুষটাকে ভালোবেসেছিলাম, একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম, তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
শর্মিলা ঠাকুর ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মভূষণ লাভ করেন। তিনি ভারতের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১১ সালে স্বামী মনসুর আলি খান পতৌদির মৃত্যুর পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজ করছেন।